নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

বিডিপ্রেস এজেন্সি ডেস্ক : সকল ধরনের নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ভোটকক্ষ থেকে ফেসবুকসহ কোনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সংবাদ প্রচার করা যাবে না। এছাড়া কোনো নির্দেশনা পালন না করলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের অন্তত ৮ মাস আগেই জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের জন্য এই ‘সাংবাদিক নীতিমালা’ চূড়ান্ত করা হলো।

বুধবার ১২ এপ্রিল ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হকের সই করা এ নীতিমালা জারি করা হয়।

ইসির সাংবাদিক নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত কার্ডধারীরাই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আইন-বিধি মেনে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করতে হবে অন্তত এক ডজন নির্দেশনা।

ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকায় যানবাহনের ওপর বিধিনেষধ আরোপ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিকদের যাতায়াতে ইসির গাড়ির স্টিকার-যুক্ত যানবাহন ব্যবহারের অনুমোদন থাকলেও মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেবে না নির্বাচন কমিশন।

এতে বলা হয়, জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচনের জন্য এই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।

এই নির্দেশনা কোনও সাংবাদিক পালন না করলে কমিশন ইসি-সংশ্লিষ্ট তার সাংবাদিক পাস বাতিল করতে পারবে।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।

গণমাধ্যম ও সাংবাদিক বিষয়টি স্পষ্ট করে নীতিমালায় অনুমোদন প্রক্রিয়া, আবেদন প্রক্রিয়া, অনুমোদন ও কার্ড প্রদান, সাপোর্ট স্টাফ, গাড়ির স্টিকার, সাংবাদিক কার্ড, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অবহিতকরণ, এবং সাংবাদিকদের পালনীয় নির্দেশনাবলি তুলে ধরা হয়েছে।

ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং স্থানীয়ভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা সাংবাদিক কার্ড ও গাড়ির স্টিকার দেওয়াসহ এসব বিষয় দেখভাল করে থাকে।

গণমাধ্যম ও সাংবাদিক

নীতিমালায় সাংবাদিক বলতে ডিক্লারেশন-প্রাপ্ত এবং নিয়মিত প্রকাশিত দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক প্রভৃতি; অনুমোদিত টেলিভিশন চ্যানেল- যা বাংলাদেশ হতে প্রচারিত হয়; অনুমোদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল; অনুমোদিত ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিভিশন; ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক (তথ্য অধিদফতরের সাংবাদিক পাসধারী), আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থায় (তথ্য অধিদফতর হতে অনুমতিপ্রাপ্ত) কর্মরত সাংবাদিক এবং বিদেশি সাংবাদিকদের (তথ্য অধিদফতরের মাধ্যমে অন্যান্য দেশ হতে আগত সাংবাদিক) বোঝানো হয়েছে।

অনুমোদন প্রক্রিয়া

কেন্দ্রীয় সাংবাদিক, রাজধানীকেন্দ্রিক গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করা হয়। এসব সাংবাদিকদের পাস ও গাড়ির স্টিকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ অধিশাখা থেকে দেওয়া হয় হয়।

এছাড়া স্থানীয় সাংবাদিক বলতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা/জেলা/উপজেলা হতে প্রকাশিত পত্রিকা এবং জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন, অনলাইন, আইপিটিভির স্থানীয় প্রতিনিধিকে বোঝায়।

স্থানীয় পর্যায়ের এসব সাংবাদিকের কার্ড ও গাড়ির স্টিকার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা তার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবেন।

আবেদন প্রক্রিয়া

ভোটের দিনের অন্তত তিন দিন আগে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের অফিসিয়াল প্যাডে নিউজ এডিটর/চিফ রিপোর্টার/বার্তাপ্রধান/ব্যুরো-প্রধান/ জেলা প্রতিনিধির সই করা আবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বা রিটার্নিং অফিসার বরাবর দাখিল করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কত জন সাংবাদিককে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হলো— তাদের নাম, প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক পরিচয়পত্র/পিআইডি এক কপি পাসপোর্ট ও এক কপি স্ট্যাম্প সাইজ রঙিন ছবি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।

গাড়ির স্টিকার

সাংবাদিকদের যাতায়াতের জন্য যৌক্তিক সংখ্যক গাড়ির স্টিকার প্রদান করা হবে। তবে মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে না। কোনও সাংবাদিকের জন্য গাড়ির স্টিকার প্রদান করা হলে স্টিকারের ক্রমিক নম্বর রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে।

সাংবাদিকরা কী করতে পারবেন, কী পারবেন না

১. নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।

২. ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোট কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন। তবে কোনোক্রমেই গোপন কক্ষের ভেতরের ছবি ধারণ করতে পারবেন না।

৩. একইসঙ্গে দুইয়ের বেশি মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি ভোটকক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না।

৪. ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারবেন না।

৫. ভোটকক্ষের ভেতর হতে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।

৬. ভোটকেন্দ্রের ভেতর হতে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ হতে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে। কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না।

৭. সাংবাদিকরা ভোট গণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, ছবি নিতে পারবেন, তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।

৮. ভোটকক্ষ হতে ফেসবুকসহ কোনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা যাবে না।

৯. কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়, এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকবেন।

১০. ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা প্রিসাইডিং অফিসারের আইনানুগ নির্দেশনা মেনে চলবেন।

১১. নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

১২. কোন প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না।

১৩. নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেকোনও ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা হতে বিরত থাকবেন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নির্বাচনী আইন ও বিধি বিধান মেনে চলবেন।

বিডিপ্রেস এজেন্সি/টিআই

আরও পড়ুন...