তাসবির ইকবাল, বিডিপ্রেস এজেন্সি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) দুই তরুণ নির্মাতার দুটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী চলছে।
বুধবার (২২ নভেম্বর) সিনেমা দুটির তিনটি হাউসফুল শো প্রদর্শনী হয়। আজ বৃহস্পতিবারও সিনেমা দুটির তিনটি শো রাখা হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিনেমা দুটির বিশেষ প্রদর্শনী করা হবে।
মাডল কমিউনিকেশনের ব্যানারে “কালার অব প্যারাডাইস” নামের সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন রাহি আব্দুল্লাহ। এতে অভিনয় করেছেন সাদেক রহমান, হিমাংশু চন্দ্র বর্মন, নুর ইসলাম ও শাওন দাশ। আর একই ব্যানারে “ফ্যাঁকড়া” বানিয়েছেন নাজমুস সাকিব; এতে অভিনয় করেছেন শাওন দাস, রিপন সোনাই ও তুহিন ইমরুল।
তরুণ নির্মাতা রাহি জানান, কালার অব প্যারাডাইসের গল্পটি একজন বোবার প্রকৃতির কাছে নিজের সত্ত্বা বিলিয়ে দেওয়ার গল্প। পদ্মার চরের এক বাবা আর ছেলের গল্প নিয়েই মূলত এটি তৈরি হয়েছে। কাছুয়া নামের এক জেলে একদিন পদ্মায় মাছ ধরতে গিয়ে মাছের সঙ্গে একটি তাবিজ পান৷
আর সেদিন রাতেই কাছুয়া স্বপ্নে দেখেন তার ছেলেকে যদি কোরআনের হাফেজ বানান তাহলে তার পরিবারের সাতজন ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচবেন। কিন্তু সমস্যা হয়েছে, কাছুয়ার ছেলে হাফিজ বোবা ও বধির। একদিকে বাবার অন্ধ বিশ্বাস আর অন্যদিকে সমাজের নিয়ম না জানা হাফিজকে কেন্দ্র করেই কালার অব প্যারাডাইসের গল্প আর্বতিত হয়েছে।
নাজমুস সাকিব জানান, “ফ্যাকড়া” অস্তিত্ব সংকটে ভোগা অনুরাগ নামের এক তরুণের গল্প। যে তরুণ একটি ফিল্ম বানাতে চান। জীবনের প্রথম ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লেখার পর থেকেই পদে পদে ধাক্কা খান তিনি। এ সময় ছিনতাইকারীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। অনুরাগ নতুন করে বেরিয়ে পড়েন তার ফিল্মের গল্পের সন্ধানে। এরপর জড়িয়ে পড়েন বিপদে।
নাজমুস সাকিবের ফিল্মমেকিংয়ের যাত্রা শুরু হয় স্কুলজীবন থেকেই। রংপুর জিলা স্কুলে অধ্যয়নের সময় থেকে বন্ধুদের নিয়ে ফিল্ম বানানোর হাতেখড়ি তার। তখন থেকে এখন পর্যন্ত স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পরিচালিত বেশ কিছু ফিল্ম বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভালে সিলেকশন পেয়েছে ও পুরস্কৃত হয়েছে। নাজমুস সাকিব এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের শেষ প্রান্তে আছেন।
রাহি আব্দুল্লাহও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায়। গ্রাম থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করে ভর্তি হন বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হন।
২০১৬ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাহি নির্মাণ করেন তার প্রথম চলচ্চিত্র। “ইয়ুথ কনসাস” নামের সেই চলচ্চিত্রে গ্রামের উঠতি বয়সের ছেলেদের মাদকের ভয়াল ফাঁদে পড়ার বিষয়টি ফুটে ওঠে। এরপর ২০১৭ সালে নির্মাণ করেন ডকুমেন্টারি “সূর্যোদয়ের সাক্ষী”।
দীর্ঘ দুই বছর কোনো সিনেমা নির্মাণ করেননি রাহি। এরপর ২০১৯ সালে নির্মাণ করেন “দ্য মাদারল্যান্ড” নামের একটি সিনেমা। ওই বছরই সিনেমাটি ভারতের হট্টমেলা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে “জুরি অ্যাওয়ার্ড” লাভ করে।
২০২০ সালে কুড়িগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রাহি নির্মাণ করেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “টেনর”। এক ব্যক্তির “মাথা কাটা” ভিসায় বিদেশ যাওয়া ও বিদেশ থেকে সন্তানের জন্য ফুটবল নিয়ে আসার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছিল চলচ্চিত্রটি। এর জন্য ২০২১ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে “বেস্ট ইয়াং ফিল্ম মেকার” পুরস্কার পান রাহি। তার “টেনর” চলচ্চিত্রটি ১৪তম শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে “বেস্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করে। এছাড়া সেটি ১৪টি দেশের বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিভিন্ন পুরস্কার পায়।
বিডিপ্রেস এজেন্সি/টিআই/সুবরান